1. ra7665785@gmail.com : admin :
সংখ্যালঘুরাই ভারত ছাড়ছে বেশি - Alifnewstv.com
September 15, 2024, 4:17 am

সংখ্যালঘুরাই ভারত ছাড়ছে বেশি

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, আগস্ট ২৪, ২০২৪
  • 20 Time View

ভারত থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসী হওয়া মানুষদের মধ্যে হিন্দুর চেয়ে অন্য ধর্মের মানুষই বেশি। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক বিশ্লেষণে বিষয়টি উঠে এসেছে।

গবেষণার বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ হিন্দু। কিন্তু যারা ভারত ছেড়ে চলে যান তাদের মধ্যে মাত্র ৪১ শতাংশ হিন্দু। বিশ্বজুড়ে অভিবাসীদের ধর্মীয় পরিচয়ের উপর জরিপ থেকে এমন চিত্রই বেরিয়ে এসেছে।

বিপরীতে মুসলিমরা ভারতের জনসংখ্যার মাত্র ১৫ শতাংশ হলেও ভারত থেকে অভিবাসী হওয়া মানুষদের মধ্যে মুসলিমের সংখ্যা দ্বিগুনেরও বেশি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করা ভারতীয় অভিবাসীদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ মুসলিম।

আর খ্রিস্টানরা ভারতের জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশ হলেও ভারত ছেড়ে যাওয়া মানুষদের মধ্যে খ্রিস্টানের সংখ্যা ৮ গুন বেশি। ভারত থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসী হওয়া মানুষের ১৬ শতাংশ খ্রিস্টান।

এই অভিবাসী মুসলিম ও খ্রিস্টানদের সবাই ভারতে জন্মগ্রহণ করার পর দেশান্তরী হয়েছেন।
দিল্লির জামা মসজিদের একটি দৃশ্য। বিষয়টি নিয়ে পিউ রিসার্চের গবেষক স্টেফানি ক্রেমারের সঙ্গে কথা বলেছিলেন বিবিসির ভারত সংবাদদাতা সৌতিক বিশ্বাস।

স্টেফানি ক্রেমার বিবিসিকে বলেন, “ভারতে বসবাস করতে আসা মুসলিম ও খ্রিস্টানদের সংখ্যার চেয়ে ভারত ছেড়ে চলে যাওয়া মুসলিম ও খ্রিস্টানদের সংখ্যা অনেক বেশি। অন্যান্য ধর্মের মানুষ, যেমন শিখ ও জৈনদেরও ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার হার দেশটিতে তাদের জনসংখ্যার অনুপাতের চেয়ে বেশি।”

বর্তমানে বিশ্বের ২৮ কোটিরও বেশি মানুষ বা বিশ্বের জনসংখ্যার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ আন্তর্জাতিক অভিবাসী। ২০২০ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী অভিবাসী জনসংখ্যার ৪৭ শতাংশ ছিল খ্রিস্টান, ২৯ শতাংশ মুসলিম, ৫ শতাংশ হিন্দু, ৪ শতাংশ বৌদ্ধ ও মাত্র ১ শতাংশ ছিল ইহুদি।

জাতিসংঘের তথ্য এবং ২৭০টি আদমশুমারি ও জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিষয়টি বের করেছে পিউ রিসার্চ। খ্রিস্টানরা ভারতীয় জনসংখ্যার মাত্র শতাংশ, কিন্তু ভারত ছেড়ে যাওয়া মানুষদের ১৬ শতাংশ খ্রিস্টান।

এছাড়া বিশ্বব্যাপী অভিবাসীদের মধ্যে নাস্তিক ও অজ্ঞেয়বাদীসহ ধর্মপরিচয়হীনদের হার ১৩ শতাংশ। এরাও তাদের জন্মভূমি ছেড়ে ভিনদেশে অভিবাসী হয়েছেন। পিউ রিসার্চের এই বিশ্লেষণে জন্মভূমির বাইরে বসবাসকারী শিশু থেকে বৃদ্ধ সব অভিবাসীকেই হিসাবে রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে, অন্য দেশ থেকে ভারতে অভিবাসী হওয়া মানুষদের ধর্মীয় পরিচয়ের সঙ্গে দেশটির জনসংখ্যার ধর্মীয় পরিচয়ের অনুপাতের অনেক মিল রয়েছে।

বিশ্লেষণে আরও বলা হচ্ছে, হিন্দুরা বিশ্বের জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ হলেও আন্তর্জাতিক অভিবাসীদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ হিন্দু।

অর্থাৎ হিন্দুদের অভিবাসন এবং দেশ ছাড়ার হার তাদের জনসংখ্যার অনুপাতের তুলনায় অনেক কম। সারা বিশ্বে প্রায় ১২০ কোটি হিন্দু আছে, যাদের ৯৫ শতাংশ ভারতে বাস করেন।

গবেষক স্টেফানি ক্রেমার বলেন, “জনসংখ্যার অনুপাতে হিন্দুদের অভিবাসনের হার কম হওয়ার কারণ হিন্দুরা ভারতে বেশি ঘনীভূত। আর ভারতে জন্মগ্রহণকারী হিন্দুদের দেশত্যাগ করার সম্ভাবনা খুব কম।

“বিশ্বজুড়ে অভিবাসীদের বিশাল অংশই ভারতীয় বংশোদ্ভুত। তবে এই লাখ লাখ অভিবাসীর মধ্যে হিন্দুদের সংখ্যা ভারতের তুলনায় অনেক কম।”

২০১০ সালে বিশ্বের হিন্দু জনগোষ্ঠীর প্রায় ৯৯ শতাংশ বাস করত এশিয়ায়— প্রায় সম্পূর্ণই ভারত ও নেপালে। গবেষকরা বলছেন, হিন্দুদের অবস্থা এখনও প্রায় একই রকম আছে, খুব বেশি হেরফের হয়নি। দেশভাগের পর ভারত থেকে হিন্দুদের খুব বেশি অভিবাসনের ঘটনা ঘটেনি। তখন যারা দেশান্তরিত হয়েছিল তাদের অনেকেই আর বেঁচে নেই।

স্টেফানি ক্রেমার বলেন, “বিপরীতে, অন্যান্য ধর্মের মানুষ বিশ্বব্যাপী আরও বেশি হারে ছড়িয়ে পড়েছে এবং দেশত্যাগে বাধ্য করে এমন আরও বেশি কারণের মুখোমুখি হয়েছে।” ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পরে দিল্লিতে উদ্বাস্তুদের ভিড়। তারপর থেকে ভারতে কোনও গণ অভিবাসন হয়নি।

তাহলে হিন্দুরাই কি বিশ্বে সবচেয়ে কম অভিবাসী হওয়া ধর্মীয় জনগোষ্ঠী? গবেষকরা বলছেন, বিশ্লেষণে দেখা গেছে অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর তুলনায় হিন্দুরা আসলেই আলাদা।

স্টেফানি ক্রেমার বলেন, “অন্যান্য ধর্মের মানুষদের তুলনায় হিন্দুদের জন্মভূমি বা নিজ দেশত্যাগের প্রবণতা অনেক কম। তাদের অভিবাসনের বেশিরভাগই ভারতকে কেন্দ্র করে ঘটে।

“অর্থাৎ ভারতে বসবাস করতে আসা বা ভারত ছেড়ে যাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বিপরীতে অন্যান্য প্রধান ধর্মের মানুষরা বহু দেশে যায় ও আসে।” বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অভিবাসনের জন্য হিন্দুরা সবচেয়ে বেশি দূরত্ব পাড়ি দেয়। হিন্দুরা গড়ে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৯৮৮ কিলোমিটার (৩১০০ মাইল) পাড়ি দেন।

তাদের বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দূরবর্তী দেশে অভিবাসিত হন। তবে এদের প্রায় সবাই অর্থনৈতিক অভিবাসী, যারা চাকরির সন্ধানে দেশত্যাগী হয়েছেন।

বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের অভিবাসী হওয়ার হার দেশটিতে তাদের জনসংখ্যার অনুপাতের চেয়ে দ্বিগুনের বেশি। হিন্দুরা বাংলাদেশের জনসংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ হলেও দেশটি থেকে অভিবাসী হওয়া জনসংখ্যার প্রায় ২১ শতাংশই হিন্দু। বিপরীতে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ মুসলিম হলেও দেশটি থেকে অভিবাসী হওয়া মানুষদের মাত্র ৬৭ শতাংশ মুসলিম।

একইভাবে হিন্দুরা পাকিস্তানের জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশ হলেও দেশটি ছেড়ে যাওয়া মানুষদের ৮ শতাংশই হিন্দু। বাংলাদেশের প্রতিবেশি মিয়ানমারে অভিবাসীদের তুলনায় এর অধিবাসীদের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ৯ গুন কম। মুসলিমরা মিয়ানমারের জনসংখ্যার মাত্র ৪ শতাংশ। অথচ দেশটি ছেড়ে যাওয়া অভিবাসীদের ৩৬ শতাংশই মুসলিম।

মিয়ানমারের জনসংখ্যায় মুসলিমদের অনুপাতের চেয়ে দেশটি ছেড়ে যাওয়া মানুষদের মধ্যে মুসলিমের অনুপাত ৯ গুন বেশি। তার মানে, মিয়ানমার থেকেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দেশ ছাড়ার হার সবেচেয়ে বেশি।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মুসলিমরাও ভিন দেশে অভিবাসী হয়। কিন্তু সেসব দেশ থেকেও ভারতের মতোই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরই দেশত্যাগের হার বেশি। তাহলে পিউ রিসার্চের বিশ্লেষণে ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর অভিবাসন বিষয়ে কোন সত্য প্রকাশিত হয়? স্টেফানি ক্রেমার বলেন, “আমরা দেখতে পাই যে, বেশিরভাগ মানুষই এমন জায়গায় যায়, যেখানে তাদের ধর্মের মানুষই বেশি। আর সংখ্যালঘুদেরই জন্মভূমি ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি।”

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category