মোঃ সাচ্চু মোল্লা :
যশোর শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মোট শিক্ষার্থী প্রায় এক হাজার ছয়শ। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানে এসেছিলেন একশরও কম শিক্ষার্থী। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গতকাল স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে ভয়-আতঙ্কে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল বোর্ড স্কুল ও কলেজটির মতো। স্কুল খুললেও কোথাও উপস্থিতি নেই, কোথাও নামেমাত্র। তবে গ্রামের দিকে বেশ কয়েকটি স্কুলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামানোর নির্দেশ দেয়া। মানতে না চাইলে ঝামেলা কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক।
যশোর শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউর রহমান জানান, আমার সহকর্মীরা সকলেই উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু শতাধিক শিক্ষার্থীও উপস্থিত হননি। যারা এসেছিলেন তারাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। ক্লাস নেয়ার পরিস্থিতি ছিল না। যারা আসছিলো তারা অভিভাবকের সঙ্গে আসছিলো। আমার সাথে কথা বলে সকলে বাড়ি চলে যায়। আমার নিজের সন্তানকেও আমি পাঠায়নি। আমার মনে হয় আগামীকালও (আজ) এমন হবে।
যশোর সদরের মন্ডলগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমেনা খাতুন বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খেলার সিদ্ধান্ত জানার পর শিক্ষার্থীদের ক্লাসের আসার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু উপস্থিত ছিলই না বলা চলে।
যশোর পৌরসভার পুরতান কসবা বালিকা বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী নুসরাত ফারিয়া স্কুলে সহপাঠী কাউকে না পেয়ে বাসায় ফিরে আসেন। যথাসময়ে স্কুলে গিয়েছিল বলে এ প্রতিবেদককে জানায়। তবে স্কুলে শিক্ষকরা আসলেও তার কোন সহপাঠী না আসায় বাসায় ফিরে আসেন।
চান্দুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেখা রানী চৌধুরী বলেন, আমার বিদ্যালয়ের প্রায় তিনশ শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে গতকাল সব মিলিয়ে ২০-৩০জন উপস্থিত ছিলেন।
যশোর কালেক্টরেট স্কুলের অধ্যক্ষ মোদাচ্ছের হোসেন বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা প্রতিষ্ঠান খুলেছি। তবে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি খুবই কম ছিল। অভিভাবকরা এখনো আতঙ্কিত। যারা এসেছিল তাদেরকে নিয়ে ক্লাস পরিচালনা করেছি।
চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের একপর্যায়ে সংঘাত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ জুলাই থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর প্রথমে ৪ আগস্ট থেকে ১২টি সিটি করপোরেশন ও নরসিংদী পৌরসভা বাদে বাকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও পরে সেটিও বন্ধ করা হয়।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবির মুখে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। দেশ পরিচালনায় অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের লক্ষ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে গতকাল সকালে যশোর জেলা প্রশাসক কার্যালয়সহ কালেক্টরেট ভবনে কর্মকর্তা উপস্থিত থাকলেও প্রায় ফাঁকা ছিল।
অফিসে আসা অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলে সময় পার করেছেন। অনেকের চোখেমুখেই ছিল আতঙ্ক। বিভিন্ন অফিস প্রধানের কক্ষ থেকে নামিয়ে ফেলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়া শেখ হাসিনার ছবি। এছাড়া অধিকাংশ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা দুপুরের পর বন্ধ করে বাসায় ফিরে যান।
ন্যাশনাল ব্যাংক চৌগাছা শাখার জুনিয়র কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ব্যাংক খুললেও লেনদেন ছিল খুবই কম।