মোঃ রবিউল ইসলাম
রংপুর ব্যুরোঃ-
কখনো ভোরের আলো ফোটার আগেই গরুর গলায় ঘণ্টা বাঁধা শব্দ শুনে দিন শুরু করত গ্রামের কৃষক। গরুর হাল নিয়ে জমি চাষের প্রস্তুতি ছিল কৃষকের প্রাত্যহিক জীবনের অন্যতম অংশ। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি সেই চিত্র এক লহমায় পাল্টে দিয়েছে।
বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে জিপিএস-নির্ভর ট্র্যাক্টর, অটোমেটেড পাওয়ার টিলার, এবং ড্রোন প্রযুক্তি। এসব অত্যাধুনিক যন্ত্র কেবল জমি চাষই নয়, সার প্রয়োগ, বীজ বপন, এবং ফসল কাটা পর্যন্ত প্রক্রিয়াকে সহজ করে তুলেছে। এর ফলে কৃষি কার্যক্রমে মানুষের শ্রমের প্রয়োজন যেমন কমেছে, তেমনি গরুর হাল ব্যবহারের দিনও শেষের দিকে।
কৃষক হযরত আলী (৪৮), যিনি একসময় ১২ বিঘা জমিতে গরুর হাল দিয়ে চাষ করতেন, আক্ষেপ করে বলেন, “যন্ত্র তো সুবিধা দিচ্ছে, কিন্তু গরুর হাল চালানোর সেই আনন্দ আর কোথায়! এখন ছেলেমেয়েরা গরুর হাল কী, সেটাই জানে না।
বর্তমান সময়ে কৃষি খাতে স্মার্ট এগ্রিকালচার সিস্টেমের ব্যবহার বাড়ছে। ফসল উৎপাদনে অতি দক্ষ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) এবং ডেটা অ্যানালিটিকস প্রযুক্তি চাষাবাদে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। এর মধ্যে রোবটিক ট্র্যাক্টর এবং আইওটি-নির্ভর কৃষি ডিভাইস উল্লেখযোগ্য। বিশেষত, ফার্মবট -এর মতো প্রযুক্তি একাই বীজ বপন থেকে শুরু করে সেচ প্রদান পর্যন্ত সবকিছু করতে সক্ষম। গরুর হাল শুধু জমি চাষের উপায় নয়; এটি বাঙালির কৃষি সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। গবেষকরা বলছেন, প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় এই ঐতিহ্য হারিয়ে গেলে আগামী প্রজন্ম হয়তো এটিকে শুধুই ইতিহাস বইয়ের পাতায় খুঁজে পাবে।
কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম মনে করেন, “প্রযুক্তি কৃষি ব্যবস্থাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে, তবে আমাদের ঐতিহ্যের প্রতি উদাসীনতা একদিন এর সাংস্কৃতিক মুল্য ধ্বংস করবে।
নেকমামুদ আপডেট পাবলিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক মশিউর রহমান শুভ বলেন গ্রামীণ ঐতিহ্য সংরক্ষণে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। একটি সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে ঐতিহ্যবাহী কৃষি পদ্ধতির প্রদর্শনীর আয়োজন এবং স্কুলের পাঠ্যক্রমে গরুর হালের ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত করা।অন্যদিকে, প্রযুক্তি আর ঐতিহ্যের মেলবন্ধন ঘটিয়ে কাজ করলে একদিকে যেমন কৃষি উৎপাদন বাড়বে, তেমনি গ্রামীণ জীবনধারার ঐতিহ্য টিকে থাকবে। সময় এসেছে কৃষি খাতে প্রযুক্তির ব্যবহারে ভারসাম্য বজায় রাখার।