ময়মনসিংহ প্রতিনিধি :
আমি দুনিয়ার আদালতে ছেলে হত্যার বিচার চাই না। তাই মামলাও করিনি। পবিত্র জুমার দিনে আমার ছেলে নিহত হয়েছে। আমি আল্লাহর কাছেই বিচার চাই।’ কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী রিদওয়ান হোসেন সাগরের (২৪) বাবা আসাদুজ্জামান।
সাগর ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন। স্নাতক তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষে চতুর্থ বর্ষে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তথ্যপ্রযুক্তিতে তার দক্ষতা থাকায় লেখাপড়ার পাশাপাশি নগরীর এম এম কম্পিউটারে খণ্ডকালীন চাকরি করতেন। আসাদুজ্জামান একজন ব্যবসায়ী। তাদের বাড়ি নগরীর আকুয়া চৌরাঙ্গিরমোড় এলাকায়। পুত্রশোকে পাথর তিনি। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে। তিনি বলেন, সব বাবা-মা সন্তানকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে ভালো চাকরি করবে, ভালোভাবে জীবনযাপন করবে। আমারও স্বপ্ন ছিল। সবই ধূলিসাৎ হয়ে গেল।
সাগরের বাবা আরও বলেন, আমার ছেলে খুবই নম্র-ভদ্র স্বভাবের ছিল। কারো সঙ্গে কখনও বেয়াদবি করেনি। তাকে কেন হত্যা করা হল। তিনি বলেন, এক বছর আগে নতুন বাসা নির্মাণ করেছি। যার জন্য বাসা করেছি সেই তো আজ নেই।
আসাদুজ্জামান জানান, সাগরের বুকের বাম পাঁজরে একটি ছিদ্র ছিল। আর পেটের ডান দিকে বড় গর্ত ছিল। গুলির আঘাতেই এমনটা হয়েছে বলে ধারণা তার।
জানা গেছে, ১৯ জুলাই ময়মনসিংহ নগরীতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ সময় মিন্টু কলেজ এলাকায় সাগরসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হন। সংঘর্ষে মোট আহত হন ৩৫ জন। তাদের হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক সাগরকে মৃত ঘোষণা করেন। ওইদিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সাগরের শরীরে বুলেটের আঘাত ছিল। তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল।
সাগরের ছোট বোন আফিয়া তাবাসসুম সরকারি আনন্দ মোহন কলেজে ম্যানেজমেন্টে অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তাদের মা রহিমা খাতুন আট বছর ধরে ক্যানসারে ভুগছেন। মৃত্যুপথযাত্রী মাও ছেলের মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ।