মেহেদী হাসান মামুন, যশোর।
২৯ নভেম্বর ২০২৪ শুক্রবার বিকাল ৩:৩০ ঘটিকায় যশোর মুড়ুলি মোড়ে দ্রব্যমূল্য কমানো, প্যালেস্টাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের আগ্রাসন ও গণহত্যা বন্ধ, শ্রমিক-কৃষক-জনগণের রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট যশোর সদর থানা কমিটির উদ্যোগে উক্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের দেশব্যাপি কর্মসূচির অংশ হিসেবে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের স্বার্থে জাতীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার দাবিতে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সদর থানা কমিটির সভাপতি শারিয়ার আমির।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ বিএম শামীমুল হক, সহ-সভাপতি সমীরণ বিশ্বাস, সহ-সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণা লাল সরকার, প্রচার সম্পাদক কামরুজ্জামান রাজেস, জাতীয় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মধুমঙ্গল বিশ্বাস, সদর থানা কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ বিশ্বাস ও প্রচার সম্পাদক হিরণ সরকার প্রমুখ।
সমাবেশটি পরিচালনা করেন সদর থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডঃ আহাদ আলী লস্কর।
নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের লাফিয়ে লাফিয়ে মূল্যবৃদ্ধির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন আজ বিশ্ব জনগণের ঘাড়ে যেমন যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে তেমনি জীবন-জীবিকার অপরিহার্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি করে চলছে। আমাদের মতো নয়াঔপনিবেশিক দেশে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের দ্বিবিধ বেপরোয়া লুটপাটের ফলে চাল, ডাল, তেল, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বছর ব্যাপী অগ্নিমুল্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবন আজ অনিশ্চিত। কৃষির জন্য অত্যাবশ্যকীয় সার, ডিজেল, কীটনাশকের মত পণ্যগুলোর অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি কৃষিব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে চলেছে। নয়াউপনিবেশিক আধাসামন্ততান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় এ যাবত অধিষ্টিত সকল সরকারই হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদের দালাল সামন্ত আমলা মুৎসুদ্দি শ্রেণির স্বার্থরক্ষাকারী সরকার। আমাদের দেশে শ্রমিক কৃষক জনগণের শ্রমে-ঘামে যে উদ্ধৃত্ত সৃষ্টি হয় তার সিংহভাগই লুটপাট করে নেয় সাম্রাজ্যবাদ ও তার এদেশীয় দালাল জোতদার-মহাজন, দুর্নীতিবাজ আমলারা। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তাদের শীর্ষ নেতারাই এই লুটপাটের সাথে জড়িত থাকে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আকাঙ্খাকে কাজে লাগিয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটানো হলেও শ্রমিক-কৃষক-জনগণের মুক্তি আসেনি। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতন ঘটলেও স্বৈরাচারী ব্যবস্থার অবসান না ঘটায় জনগণ যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়েছে। গত নভেম্বরে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শেখ হাসিনার পুলিশ বাহিনীর হাতে যেমন গার্মেন্টস শ্রমিকদের প্রাণ দিতে হয়েছে তেমনি বর্তমান অন্তবর্তকালীন সরকারের হাতেও পুলিশের গুলিতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছে। আজ তিন মাস যাবত সরকারি মালিকানাধীন এনটিসির ১২ টি চা-বাগানের প্রায় ১২ হাজার চা-শ্রমিক মজুরি-রেশন থেকে বঞ্চিত, অথচ সরকার নির্বিকার। বিগত সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লুটপাটের মহাউৎসবে মিলিত হয়েছিল ঠিক অনুরূপভাবে বর্তমানে সাম্রাজ্যবাদের দালাল অন্যান্য বিরোধী দলগুলো সেই লুটপাটের মহাউৎসবে মিলিত হয়েছে। বিগত সময়গুলোতে বিএনপিসহ দেশের অন্যান্য দলগুলো লোকদেখানো জনগণের বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে কথা বললেও বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতিসহ জাতীয় ও জনগণের জরুরী সমস্যা নিয়ে তারা নিরব।
সভায় বক্তারা আরও বলেন, সমগ্র পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থা এক গভীর ও সামগ্রিক সংকট, দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ, মুদ্রাযুদ্ধ, আঞ্চলিক ও স্থানিক যুদ্ধের প্রক্রিয়ায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে। বিশ্ব বাজার পুনর্বন্টন নিয়ে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো যে যুদ্ধ প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা নিয়ে ধারাবাহিক তৎপরতা চালাচ্ছে তারই প্রতিফলন ঘটছে ইউক্রেনে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে। এই যুদ্ধের লক্ষ্য হচ্ছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্ব গঠিত সামরিক জোট ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণ নীতি মোকাবেলা করে রাশিয়ার স্বীয় লক্ষ্য হাসিল করা। অন্যদিকে তাইওয়ান স্বাধীনতার ইস্যু নিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও বৃহত সাম্রাজ্যবাদের লক্ষ্যে অগ্রসরমান পুঁজিবাদী চীনের মুখোমুখি অবস্থান ও তাইওয়ান স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে তাকে চীনের রেড লাইন ঘোষণা বিশ্ব পরিস্থিতিকে উত্তেজনাকর করে তুলেছে। আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা মূর্ত হয়ে উঠেছে। সাম্রাজ্যবাদীরা জোরদার করছে সর্বাত্মক যুদ্ধ প্রস্তুতিকে। তাদের এই যুদ্ধ প্রস্তুতি থেকে আমাদের দেশও মুক্ত নয়। ভূ-রাজনৈতিক ও রণনীতিগত গুরুত্বের প্রেক্ষিতে ভারতীয় উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশকে নিয়েও আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব সুতীব্র। সাম্প্রতিক দেশের ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পিছনেও রয়েছে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অবস্থান আরও অগ্রসর হয়। সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে ক্ষমতার পট পরিবর্তন ঘটলেও বিদ্যমান আর্থসামাজিক ব্যবস্থার কোন পরিবর্তন ঘটেনি। তাই বিদ্যমান নয়াউপনিবেশিক আধাসামন্তবাদী সমাজ কাঠামো অক্ষুন্ন রেখে সাম্রাজ্যবাদের এক দালালের পরিবর্তে আরেক দালাল বা এক সাম্রাজ্যবাদের পরিবর্তে আরেক সাম্রাজ্যবাদের দালাল ক্ষমতাসীন হলেও জনগণের কোন মৌলিক পরিবর্তন হবে না। তাই সকল সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে জাতীয় গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে বেগবান করে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের সামগ্রিক মুক্তির লক্ষ্যে জাতীয় গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রসর হতে হব।